Monday, December 11, 2023

পলি জমিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে চর সৃষ্টির পরিকল্পনা

পলি জমিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে চর সৃষ্টির পরিকল্পনা

 

নদী ভাঙনের ফলে ভাটিতে চলে যাওয়া পলি মাটি জমানোর উচ্চাকাঙ্খী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাটি জমিয়ে নতুন করে চর সৃষ্টি করা হবে। আর নদী ভাঙনে গৃহহীনদের এ চরে পুর্নবাসন করা হবে। এ লক্ষ্যে গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।



জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ঘুর্ণিঝড়, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর অসংখ্য লোকককে গৃহহীন হতে হচ্ছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, `কেবল নদীভাঙনের ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর ২০ হাজার হেক্টর (২০০ বর্গকিলোমিটার । ১০০ হেক্টর সমান ১ বর্গকিলোমিটার ) জমি হারাচ্ছে।

২০১৩ সালে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু ও ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসেক্স সেন্টার ফর মাইগ্রেশন রিসার্চ এক গবেষণায় জানিয়েছিল, প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে ২ লাখ লোক গৃহহীন হয়।

 

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা- বাংলাদেশের এই তিনটি প্রধান নদী প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি ভাটিতে বয়ে নিয়ে যায়। ঢাকার সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশের নদীগুলো একশ কোটি টন পলিমাটি বয়ে নিয়ে যায়। এর অধিকাংশই বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে জমা হয়।

 

সিইজিআইএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক মালিক খান জানিয়েছেন, আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এই পলিমাটি যদি নোয়াখালীর নিচু এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সাগরে নতুন ভূমি জেগে উঠবে।

 

তিনি বলেন, ‘নদীতে বয়ে যাওয়া পলিমাটির মাধ্যমে নতুন জমি সৃষ্টি করা জরুরী।’

 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাটিতে বয়ে যাওয়া পলিমাটি আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যাওয়ার আগেই আটকানো সম্ভব। যেহেতু এ মাটি বাঁধের পেছনে জমা হয়, সেহেতু এটি বিশাল চর সৃষ্টি করতে পারে, যা মানুষের বসবাসের জন্য যথেষ্ঠ।

 

ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনিস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) উপকূল, বন্দর ও নদী মোহনা বিভাগের পরিচালক জহিরুল হক খান জানান, নিঝুম দ্বীপ ও মনপুরা দ্বীপ এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চর জেগেছে। আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নোয়াখালির উরির চর ও চট্টগ্রামে সন্দ্বীপ এলাকায় নদীতে বয়ে আসা প্রচুর পলিমাটির সাহায্যে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নতুন স্থলভাগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

 

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, আশা করা হচ্ছে আগামী ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি সৃষ্টি করতে পারবে ( প্রতি বছর ৫০০ বর্গকিলোমিটার ) ।

 

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে মেঘনার মোহনায় ভাঙন অব্যাহত থাকায়, আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে সাগরে নতুন ভূমি সৃষ্টি করা গেলে নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সেখানে সহজেই পুর্নবাসন করা যাবে।

 

বাঁধ দিয়ে সংগৃহীত পলিমাটির মাধ্যমে নতুন ভূমি সৃষ্টির জন্য গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। নিচু অঞ্চলের দেশ হওয়ায় এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। এ চুক্তির ফলে নেদারল্যান্ডস এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, উন্নয়ন ও এর বাস্তবায়ন করবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/শাহেদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম


Sunday, December 10, 2023

সন্দ্বীপ উপকূলে চর, সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার

সন্দ্বীপ উপকূলে চর, সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার

 সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকায় জেগে উঠছে নতুন চর। চরের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশজুড়ে সবুজ উড়ির (একপ্রকার ঘাস) সমারোহ। জোয়ারের সময় দেখা না গেলেও ভাটায় স্পষ্টভাবে এর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলছে।



দ্রুত জেগে ওঠা চরের বিশাল অংশে ‘উড়ির’ সবুজ সমারোহ এলাকার মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মেঘনার ভাঙনে অন্যত্র ভাড়ায় কিংবা নতুন ঘর তৈরির চিন্তা-ভাবনা করছিলেন যারা, তারা অনেকেই পুনরায় ফিরে আসছেন। যারা মেঘনার করাল গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন, তাদের চোখে এখন আলোর ঝিলিক। হারানো ভূমি ফিরে পাওয়ার দৃঢ় আশা।

সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন টিটু বলেন, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জেগে উঠেছে। এর আশেপাশে যেভাবে চর জেগে উঠছে তাতে সেদিন আর দূরে নয়, অচিরে আমরা উড়িরচরসহ কোম্পানিগঞ্জের সঙ্গে মিশে যাব।

সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএ বলেন, ৬০ মৌজার সন্দ্বীপ ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাঙন থেকে উদ্ধার হয়েছে। সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে খুব দ্রুত এ এলাকায় বিশাল ভূমি জেগে উঠবে। বিশেষ করে হরিশপুর ও দীর্ঘাপাড়ের ভাঙনকবলিত মানুষ জায়গা-সম্পত্তি পুনরায় নদীবক্ষে জেগে ওঠায় আশার আলো দেখছে।

সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে ষাটের দশকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর। আবার দ্বীপের পশ্চিমে চর জাহাইজ্যা (স্বর্ণদ্বীপ), চর ক্যারিং, ঠ্যাংগার চর (বর্তমানে ভাসানচর) মিলে জেগে উঠা নতুন ভূমির পরিমাণ সন্দ্বীপের প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপজুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে জেগে ওঠা চরগুলো আশেপাশে পলি জমে বিস্তৃত হয়ে সাগর মোহনায় সাংগু গ্যাসফিল্ডের কাছাকাছি চলে গেছে। দিন দিন এ চরের পরিধি বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৫০ বছর ধরে মেঘনা মোহনায় ভূমি জাগরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। কখনও প্রকৃতির আপন খেয়ালে, আবার কখনও ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ ভূমি উদ্ধার হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা সমীক্ষা-২০০১ এর মতে, প্রকৃতিগতভাবে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর ভূমি এ মোহনায় জেগে উঠছে। তবে বর্তমানে এর পরিমাণ আশাতীত বেড়ে গেছে।

সন্দ্বীপের তিনপাশে গড়ে ওঠা নতুন চর ছাড়াও এর পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপ, চর কবিরা, চর কালাম, চর আলীম, চর সাগরিকা, উচখালী, নিউ ঢালচরসহ প্রায় ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও চর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতে, এই এলাকায় প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৫-২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চরের সন্ধান মিলছে।

জানা যায়, সাগর মোহনায় জেগে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ এটিকে ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে সরকারের ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পে মেঘনা মোহনা অনুসন্ধান, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংসহ আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সরকারের আরও ছয়টি বিভাগ-এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, কৃষি, ভূমি, বন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সন্দ্বীপের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচরের পশ্চিমে সৃষ্ট নতুন চরে হেঁটে চরলক্ষ্মী যাওয়া যায়। জাহাইজ্যা বা স্বর্ণদ্বীপ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসানচরে (ঠ্যাংগার চর) এখন চলছে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

জেগে ওঠা ভূমির স্থায়িত্ব সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন মুন্না জয়নিউজকে বলেন, সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের ঠ্যাংগার চর (ভাসান চর) বয়ে আসা ¯্রােতধারার লোড নিচ্ছে। এর ফলে দ্বীপের পশ্চিমে ফুলে ওঠা বিশাল ভূমি টিকেও যেতে পারে। তবে ভূমি উদ্ধারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হার্ড ও সফট ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল প্রয়োগ করে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কুতুবদিয়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি ভূমি সংরক্ষণে সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্বল্প পরিসরে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

জেগে ওঠা নতুন ভূমি খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ভূমি সংরক্ষণ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন ভূমি সংরক্ষণ সম্ভব হলে বদলে যাবে দেশের মানচিত্র। তাতে উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনসহ কৃষি ও পশুপালনক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জয়নিউজ/আরসি

Saturday, November 25, 2023

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক, মহীসোপান নিয়ে বিতর্ক

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক, মহীসোপান নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশ জাতিসংঘে মহীসোপানের যে দাবি দিয়েছে, সেটির আয়তন ৮ হাজার ৭শ বর্গকিলোমিটার। 

আর বিতর্কিত 'গ্রে এরিয়া' বা ধূসর এলাকার আয়তন ৭২০ বর্গকিলোমিটার।

ভারত আদালতের রায় মেনে তাদের বেইজলাইন সংশোধন করলে এই 'গ্রে এরিয়া' থাকে না।



বঙ্গোপসাগরে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে। ২০১১ সালে ইটলসের রায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়।

সমুদ্রসীমানা নিয়ে দুটি রায়ের পর বাংলাদেশ যখন নতুন বেইজলাইন টেনে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন করে, তারপরই বর্তমান সংকটের শুরু।

বাংলাদেশ জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি প্রথম তুলে ধরে ২০১১ সালে। কিন্তু মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মহীসোপানের ওই দাবি সংশোধন করে ২০২০ সালে নতুন করে কমিশনে জমা দেয়।

বাংলাদেশ সংশোধিত মহীসোপানের দাবি উপস্থাপনের ছয় মাসের মধ্যেই ভারত জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায়। ২০২১ সালের ১৬ই এপ্রিল ভারত জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক চিঠিটি দিয়ে তুলে ধরে।

ভারত সরকারের বক্তব্য হচ্ছে এটা গ্রে এরিয়ার (ধুসর এলাকা) ভেতরে পড়ে যাচ্ছে এবং ইন্ডিয়ার যে এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন তার ভেতরে পড়ে যাচ্ছে। তার মানে দু'শো নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মহীসোপানের দাবি নিয়ে বর্তমান বিরোধের মূলে রয়েছে দু'দেশের বেইজলাইন। এ বেইজলাইন নিয়ে দুই দেশেরই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং আপত্তি আছে।

এ বেইজলাইন বা ভিত্তিরেখা ধরেই উপকূল থেকে সমূদ্রের ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটরিয়াল সী, ২শ নটিক্যাল মাইল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তারপর মহীসোপান পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়।

দুদেশের বেইজলাইন সমুদ্র উপকূল জুড়ে বিভিন্ন অবস্থানে পয়েন্ট আকারে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংশোধিত বেইজলাইনে ৫টি পয়েন্ট আছে আর ভারতের বেইজলাইনের ৮৯টি পয়েন্ট দ্বারা বিভক্ত।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বেইজলাইন সংশোধন করে। সেই বেইজলাইনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের কমিশনে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন করে। বাংলাদেশের নতুন বেইজলাইনের ২ ও ৫ নম্বর পয়েন্টের অবস্থান নিয়ে ভারতের আপত্তি।

বাংলাদেশের নতুন বেইজলাইনের ২ ও ৫ নম্বর পয়েন্টে ব্যাপারে ২০১৭ সালের ৩রা আগস্ট ভারত জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি লিখে সুনির্দিষ্ট করে আপত্তি জানায়।

ওই চিঠিতে বলা হয় নতুন বেইজলাইন ধরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা টানলে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে, যেখানে একটি গ্রে এরিয়া বা ধুসর এলাকা চিহ্নিত রয়েছে।

২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে আদালতের রায়ের পর বাংলাদেশ নতুন করে বেইজলাইন সংশোধন করে। সেই বেইজলাইন ধরে জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি সংশোধিত আকারে পেশ করে করে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে।

বাংলাদেশের বক্তব্য হলো আদালতের রায় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি মেনেই বাংলাদেশ বেইজলাইন নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ অভিযোগ করছে যে ভারত আদালতের রায়ের পর তাদের বেইজলাইন সংশোধন করেনি। ভারত বেইজলাইন সংশোধন না করায় গ্রে এরিয়ার সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের বেইজলাইনের ৮৭ ও ৮৯ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিষয়াবলি ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম।

বিবিসিকে তিনি বলেন, আদালতের রায় অনুসরণ করে আইন-কানুন মেনেই বাংলাদেশ তাদের বেইজলাইন সংশোধন করেছে এবং মহীসোপানের সংশোধিত দাবি জাতিসংঘে উপস্থাপন করেছে।

"ভারতের বেইজলাইন যেটা বালাশোর উপকূল থেকে সোজা যে টানা হয়েছে, সেখানে ৮৭ নম্বর পয়েন্ট দশ কিলোমিটার সমুদ্রের ভেতর রয়েছে- যে কারণে গ্রে এরিয়া সৃষ্টি হয়।"

তিনি জানান, "এটা না থাকলেতো গ্রে এরিয়ারই সৃষ্টি হয় না। এবং পয়েন্ট ৮৯ এটা এখনো বাংলাদেশের সমূদ্রসীমার ২.৩ নটিক্যাল মাইল ভেতরে। এটা তারা এখনো সরায় নাই ২০০৯ সাল থেকে। আমরা এটাই বলেছি যে, তোমরা আপত্তি দিয়েছ, তার আগে তোমাদের কাজগুলো ঠিক করার দরকার ছিল।"

খুরশেদ আলম বলছেন, মহীসোপানের বিষয়টি এখন জাতিসংঘের কমিশনই নিস্পত্তি করবে। তবে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনাও অব্যাহত আছে ।

"কূটনৈতিকভাবে কথাবার্তা চলতেছে। আবার ওনারা চিঠি দিচ্ছে আমরাও দিচ্ছি। দেখা যাক এটা কূটনৈতিকভাবে যদি সমাধান হয়, ওনারা পয়েন্ট দুটো উঠিয়ে নেয় ফাইন। কিন্তু মহীসোপানের ব্যাপারে হয়তো কূটনৈতিকভাবে কিছু করার নাই, এটা জাতিসংঘ করবে।"

মহীসোপানের দাবি নিষ্পত্তি নিয়ে ভারতের সাবেক জরিপ কর্মকর্তা বিজন কুমার সাহা বলেন, আপত্তি যে যাই করুক মহীসোপানের সিদ্ধান্ত হবে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে - এটা কেউ চাইলেই পাবে - বিষয়টা এমন নয়।

"দুটো দেশের বাউন্ডারি সেটা স্থল বা জলসীমায় হোক, সেটা একটা ম্যাটার অফ ডিমারকেশন।"

"কিন্তু এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন বা লিগ্যাল কন্টিনেন্টাল শেলফ এটা লজ অফ দা সী'তে পরিস্কারভাবে বলে দেয়া আছে - যে ২শ নটিক্যাল মাইলের পরে কতটুকু মহীসোপান পাওয়া যাবে, কী কী কারণে পাওয়া যাবে, কী করলে পাওয়া যাবে, কোথায় পাওয়া যাবে। নিশ্চয়ই কমিশন এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত দেবেন।"

সাগরের মহীসোপান এলাকায় পানিতে মাছ ধরার অধিকার থাকে সব দেশের। কিন্তু মহীসোপানের মূল গুরুত্ব হলো মাটির নিচের সম্পদের কারণে। মহীসোপান যে দেশের অধিকারে থাকবে, সে দেশই ওই এলাকার মাটির নিচের সম্পদের মালিক হবে। মহীসোপানে তেল গ্যাস অনুসন্ধান এবং অন্য যেকোনো খনিজ পদার্থ উত্তোলন অনুসন্ধানের জন্য এর বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজন।

Source : bbc.com/bengali/news-58671740

মহীসোপান যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ?

মহীসোপান মূলত একটি দেশের সীমানারই অংশ। ভূখণ্ডের মতো সাগরের এই মহীসোপান নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের ভূখণ্ডের বেসলাইন থেকে লম্বাভাবে প্রথম ২০০ মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইইজেড। এখানে যেমন ওই দেশটি একচেটিয়াভাবে মৎস্য আহরণ করতে পারে। আবার সেখানকার সাগর তলে থাকা সকল খনিজ সম্পদের মালিকও ওই দেশ।

সেই সঙ্গে মহীসোপানের যে বর্ধিত অংশটি থাকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন আরও ১৫০ মাইল, সেটিও আসলে ওই দেশের একটি বর্ধিত অংশ।

এখানে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বর্ধিত অংশের পানি বাংলাদেশসহ অন্য দেশ মাছ ধরতে যেমন পারবে। ফলে তার মৎস্য আহরণের সীমানা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই মহীসোপান এলাকায় পানির নীচে পাওয়া সব খনিজ সম্পদের মালিক হবে দেশটি। যেমন বাংলাদেশের একচেটিয়া অঞ্চলের ২০০ মাইল আর বর্ধিত মহীসোপানের ১৫০ মাইল- এই সাড়ে তিনশো মাইলে পাওয়া যেকোনো খনিজ সম্পদের মালিক হবে বাংলাদেশ। আবার এই পুরো এলাকায় বাংলাদেশের ট্রলার ইচ্ছেমত মাছও ধরতে পারবে।

মহীসোপান সব দেশের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাধারণত মহীসোপান এলাকার ভেতরে তেল-গ্যাস বা অন্য খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়, তা উত্তোলনে খরচ কম হয়ে থাকে। ফলে সেটি উত্তোলনযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হয়ে থাকে। ফলে এই সীমানা অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণেই অনেক সময় মহীসোপানের এলাকা নিয়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা যায়।

অ্যাডমিরাল (অব) খুরশীদ আলম বলছেন, ''খনিজ সম্পদের কারণেই মহীসোপানের এতো গুরুত্ব। তেল, গ্যাস, সালফার, মেটালিক মডিউল, কোবাল-সব কিছুর মালিক আপনি।''

যেমন এসব এলাকার মধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্লক রয়েছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে ।

এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানে এক বিরাট এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন।

"এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরণের প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।" বলেছিলেন তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

বাংলাদেশ ও ভারতের মহীসোপান ইস্যু

২০১১ সালে জাতিসংঘে মহীসোপানের নিজেদের প্রাপ্য দাবি করে আবেদন করে বাংলাদেশ। যদিও ২০২০ সালের অক্টোবরে ওই দাবির বিষয়ে সংশোধনী দেয় ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশীদ আলম বলছেন, ''মহীসোপান সব দেশেরই একটা অধিকার। সব দেশে ২০০ মাইল পর্যন্ত ইইজেড পাবে, আর সাড়ে তিনশো মাইল পর্যন্ত মহীসোপান পাবে।''

বাংলাদেশ নিজেদের মহীসোপান এলাকা দাবি করে ২০১১ সালে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) আবেদন করেছিল।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মামলায় যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করে।

সেই রায়ে মহীসোপানের সীমানা আলাদাভাবে নির্ধারণ করার কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সিএলসিএসে সংশোধনী জমা দেয়।

গত শুক্রবার ওই সীমানার ব্যাপারে আপত্তি দিয়ে ভারত বলছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের যে বেসলাইনের ওপর ভিত্তি করে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, সেটির মাধ্যমে ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ দাবি করছে বাংলাদেশ। এছাড়া সেখানে বঙ্গোপসাগরে থাকা গ্রে এরিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশ কোন তথ্য দেয়নি।

এর আগে ভারত যে বেসলাইনের ভিত্তিতে মহীসোপানের দাবি তুলেছিল, সেটির বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আপত্তি জানিয়েছে। সেই আপত্তি এখনো রয়েছে।

যদিও বঙ্গোপসাগরের প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশের মহীসোপান দাবি ইস্যুতে কোন আপত্তি তোলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশেদ আলম বলছেন, ''ভারতের আপত্তির ব্যাপারে আমি আইনগত জোরালো কোন ভিত্তি দেখছি না। কারণ আমাদের মহীসোপান আদালত থেকে ফয়সালা করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভারতের আপত্তির কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলেই আমি মনে করি। তারপরেও তাদের আপত্তির বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা জাতিসংঘে জবাব দেবো।''

তিনি বলছেন, আপত্তির যেসব পয়েন্ট ভারত তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে মহীসোপানের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ পানির বিষয়ে আপত্তির সঙ্গে তো মহীসোপানের বিষয় মেলে না।

এই বিরোধের ব্যাপারে কারা সিদ্ধান্ত দেবে?

বাংলাদেশ ও ভারতের মহীসোপান সংক্রান্ত বিরোধের ব্যাপারে সুপারিশ দেবে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণসংক্রান্ত কমিশন (সিএলসিএস)। দুই দেশের বক্তব্য বিচার বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি তাদের সুপারিশ জানাবে।

সেই সুপারিশের ব্যাপারেও আবার আপত্তি জানানো যাবে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেহেতু আদালত সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার বাইরে বাংলাদেশের যাওয়ার সুযোগ নেই।

''কোর্টের রায় যেটা আমরা পেয়েছি, সেটাই আমরা পাবো। সেটার ওপরেই চেয়েছিলাম যে, তাদের (জাতিসংঘের) যে একটা রোল এখানে আছে, সেটাই যেন তারা পূর্ণ করে।'' বলছিলেন মি. আলম।

কোন দেশ মানতে রাজি না হলে তারা পুনর্বিবেচনার পর আবার সিএলসিএসে যেতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত যে সুপারিশ তারা দেবে, সেটা সব দেশকে মানতে হয়, সেটাই নিয়ম, বলছেন অ্যাডমিরাল খুরশীদ আলম।

এখানে আদালতের মতো কোন শুনানি হয় না। তবে সিএলসিএসের যে কমিটি রয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট দেশ তথ্য-প্রমাণসহ একটি প্রেজেন্টেশন দিতে পারে।

Source : bbc.com/bengali/news-56792341

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ৫০ বর্গ কিলোমিটারের একটি গ্রে এরিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আদালত রায়ে বলেছেন, এ বিষয়টি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নেবে। আন্তর্জাতিক আদালত সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা ঠিক করায় এ গ্রে এরিয়ার সৃষ্টি হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমানার ৫০ বর্গ কিমি এরিয়া ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে বা ওভার ল্যাপিং হয়েছে। গ্রে এরিয়ার সমুদ্রের তলদেশের সম্পদের একক মালিকানা বাংলাদেশের। আর সমুদ্রের উপরিভাগের সম্পদের মালিকানা উভয় দেশের।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ-সংক্রান্ত হেগের স্থায়ী আদালত থেকে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। এ নিষ্পত্তি খুবই ন্যায়সংগত এবং বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। এটা থেকে মনে হয়, আমরা লাভবান হয়েছি। কিন্তু মানচিত্র দেখলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যা হোক, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারত দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়। কিন্তু ওই ভারত সমঝোতার বিষয়ে পরে ভারত তার নিজের স্বার্থে আপত্তি জানিয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার মনে হয়, দুই পক্ষ জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই এসব নিষ্পত্তি করবে, কিন্তু সেখানে হয়তো উভয় পক্ষই কমনগ্রাউন্ড খুঁজে পায়নি, সে কারণেই জাতিসংঘের কাছে যাওয়া। আমরা যেহেতু পারছি না, জাতিসংঘ সাহায্য করতে পারে। 
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. কেএম আজম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা এখন জাতিসংঘের সিএলসিএস কোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। গ্রে এরিয়া সমুদ্রের মহীসোপানের একটি বিষয়। এ গ্রে এরিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার রয়েছে। তাই এটা দুই দেশের মধ্যে সমাধান করা একটু ডিফিকাল্ট, এটা ত্রিদেশীয় একটা বিষয়। আর এখানে বাংলাদেশের কিন্তু আলাদা কোনো মহীসোপান নেই। গ্রে এরিয়ায় বাংলাদেশ পানি ছাড়া মাটির অংশটুকুও পাবে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের রায় অনুযায়ী, গ্রে এরিয়ার মাটির নিচের সম্পদের অধিকারও বাংলাদেশের রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে কোর্টের নিষ্পত্তির রায়ে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

shomoyeralo.com/details.php?id=225164


Thursday, April 20, 2023

১০০ বছর পর ২০এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বৃহস্পতিবার বিরলতম সূর্য গ্রহণ

১০০ বছর পর ২০এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বৃহস্পতিবার বিরলতম সূর্য গ্রহণ

 



১০০ বছর পর ২০এপ্রিল বিরলতম সূর্য গ্রহণ ২০ শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার সংঘটিত হতে যাচ্ছে এই বিরল সূর্যগ্রহণ । এই সূর্যগ্রহণ টি হবে পুর্নগ্রাস সূর্যগ্রহণ,অর্থ্যাৎ সূর্যগ্রহণ চলাকালীন সময়ে চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে নিবে। একই সময়ে তিন ধরনের গ্রহণ দেখা যাবে বলে একে শংকর সূর্যগ্রহণ বলা হয়। ১০০ বছর পর বিরলতম সূর্যগ্রহণটি আবার ঘটতে চলেছে।

এই সূর্যগ্রহণ কে হাইব্রিড বা শংকর সূর্যগ্রহণ বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। কারণ এদিন একই সঙ্গে তিন ধরনের গ্রহণ দেখা যাবে। এই সূর্যগ্রহণকে Ningalu Solar Eclipse-ও বলা হয়ে থাকে।আসুন জেনে নিই, শংকর সূর্যগ্রহণ কী?

যখন তিন ধরনের সূর্যগ্রহণ- আংশিক গ্রহন,পূর্ণগ্রাস এবং বলয়গ্রাস গ্রহণ দেখা যায়, তখন তাকে শঙ্কর গ্রহণ বলে। এই ধরনের গ্রহণ অত্যন্ত বিরল। শঙ্কর সূর্যগ্রহণ ১০০ বছরে একবার দেখা যাবে। এই তিন ধরনের গ্রহণ হলো…

আংশিক সূর্যগ্রহণ

আংশিক সূর্যগ্রহণ, যখন চাঁদ এমনভাবে সূর্যের সামনে দিয়ে যায় যাতে সূর্যের কিছু অংশ চাঁদের ছায়ায় ঢেকে যায় তখন তাকে আংশিক সূর্যগ্রহণ বলে।

বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ

যবলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ, খন চাঁদ এমন দূরত্বে চলে যায় যে এটি সূর্যের ঠিক মাঝখানে থাকে, তখন চাঁদের ছায়া সূর্যের উপর এমনভাবে পড়ে যে সূর্যকে পৃথিবী থেকে আগুনের বলয়ের মতো দেখায়, একে বৃত্তাকার গ্রহণ বলে।

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ, সূর্য এবং চাঁদ যখন সম্পূর্ণ সরলরেখায় থাকে, তখন সূর্য পৃথিবীর কিছু অংশে সম্পূর্ণরূপে আবৃত থাকে। পৃথিবীর এই সমস্ত অঞ্চলে দিনের বেলায় রাতের মতো অন্ধকার হয় । একে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ বলা হয়।

সূর্যগ্রহণের সময়

সূর্যগ্রহণের সময়, আগামী ২০ এপ্রিল ২০২৩ বৃহস্পতিবার হবে এই বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ। সূর্যগ্রহণ ২০২৩। ১০০ বছর পর ২০এপ্রিল বিরলতম সূর্য গ্রহণ, বাংলাদেশ সময় অনুসারে সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে গ্রহণ লাগবে এবং গ্রহণ ছেড়ে যাবে বেলা ১২টা ৫৯ মিনিটে। মোট ৫ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ধরে চলবে সূর্যগ্রহণ।

সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যগ্রহণ টি বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টা বেজে ৩৪ মিনিটে শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময় সকাল ৮ টা বেজে ৩৭ মিনিটে পূর্ণগ্রাস গ্রহন শুরু হবে।
পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টা বেজে ১৬ মিনিটে এবং শেষ হবে দুপুর ১১ টা বেজে ৫৬ মিনিটে।
পুরোপুরি শেষ হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২ টা বেজে ৫৯ মিনিটে।

২০২৩ সালে মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল

২০২৩ সালে মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল লোকদের জন্য দুর্দান্ত চমক রয়েছে। মহাজাগতিক ঘটনা যেমন উল্কাপাত, চন্দ্রগ্রহণ এবং সুপার মুন সারা বছর জুড়ে ঘটবে। প্রায় প্রতি বছর ১২টি পূর্ণিমা হয়। তবে এবার দেখা যাবে ১৩টি। এর মধ্যে দুটি হবে আগস্টে। দ্বিতীয় পূর্ণিমা একটি নীল চাঁদ হবে।

গড়ে প্রতি আড়াই বছরে একটি নীল চাঁদ দেখা যায়। ২০২৩ সালে মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল, স্পেস অবজারভেটরি আর্থস্কাই আগস্টের পূর্ণিমাকে সুপারমুন বলে অভিহিত করেছে। তবে সুপারমুনের সংজ্ঞা ভিন্ন। পূর্ণিমায়, চাঁদ যখন উজ্জ্বল এবং পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে, তখন এটি একটি সুপারমুন। সেই হিসাবে, জুলাইয়ের চাঁদকে সুপারমুন হিসাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

ইতিমধ্যে, পৃথিবী ২০২৩ সালে দুটি সূর্যগ্রহণ এবং দুটি চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী হবে৷ ২০২৩ সালে মহাকাশ নিয়ে কৌতূহল, ২০এপ্রিল একটি সূর্যগ্রহণ ঘটবে এবং অপরটি পশ্চিম গোলার্ধে সূর্যগ্রহণ ১৪ অক্টোবর হবে। এই ঘটনাটি উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দেখা যাবে। অন্যদিকে চন্দ্রগ্রহণ হবে ৫ মে এবং ২৮ অক্টোবর। প্রথমটি আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেখা যাবে। দ্বিতীয়টি ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকার কিছু অংশে দেখা যায়।

২০২৩ সালে মোট বারোটি উল্কাবৃষ্টি হবে। প্রথম পর্বটি ৩ এবং ৪ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয়টি এপ্রিল মাসে। এরপর পরপর জুলাইয়ে দুটি, আগস্টে একটি, অক্টোবরে একটি এবং নভেম্বরে দুটি উল্কাপাত হবে। কিন্তু এসব অপরূপ দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে শহুরে আলোক দূষণমুক্ত জায়গায় দাঁড়াতে হবে। সূর্যগ্রহণ ২০২৩। ১০০ বছর পর ২০এপ্রিল বিরলতম সূর্য গ্রহণ, একটি প্রশস্ত মাঠ বা খোলা জায়গায় যান এবং সোজা উপরে দেখুন। চোখের অন্ধকারের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য ২০-৩০ মিনিট। কোন ফোন ছাড়া থাকতে হবে,তারপর আছে চমক।

বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ ২০ এপ্রিল

বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ ২০ এপ্রিল ১৫০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ, যার অর্থ হল সূর্যগ্রহণ যে স্থানে ঘটবে সেখানে কিছু সময়ের জন্য সূর্য এবং চাঁদের ছায়া থাকবে। তবে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে এই গ্রহন দেখা যাবে না। সূর্যগ্রহণ ২০২৩। ১০০ বছর পর ২০এপ্রিল বিরলতম সূর্য গ্রহণ, এই সূর্যগ্রহণ কম্বোডিয়া, চীন, আমেরিকা, মাইক্রোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিজি, জাপান, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, পাপুয়া নিউ গিনি, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ ভারত মহাসাগর অন্তর্ভুক্ত করে অঞ্চল, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত এলাকা থেকে দেখা যাবে।

বাংলাদেশে সূর্যগ্রহণ

বাংলাদেশ সূর্যগ্রহণ, বাংলাদেশ থেকে যেহেতু গ্রহণ টি দেখা যাবে না, তাই বাংলাদেশের মানুষের এ নিয়ে ভাবার কোনো কারণ নেই । সূর্যগ্রহণ ২০২৩। ১০০ বছর পর ২০এপ্রিল বিরলতম সূর্য গ্রহণ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ থেকে একটি আংশিক সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হবে। তবে,এই শতাব্দীতে বাংলাদেশ থেকে কোনো পুরোপুরি সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না,শুধুমাত্র আংশিক দেখা যাবে।

 

আর ধর্মীয় বিষয়গুলো মাথায় রাখলে এ সময় বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বেন। কোনো কুসংস্কারে কান দেবেন না।