Showing posts with label শখ ও অবসর. Show all posts
Showing posts with label শখ ও অবসর. Show all posts

Friday, December 23, 2022

ফিকশন ও নন-ফিকশন সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্য

ফিকশন ও নন-ফিকশন সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্য



ফিকশন ও নন-ফিকশন সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্য এই দুই বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা প্রকাশ করে। আর, প্রথমেই বলে রাখি, ফিকশন শব্দটি ইংরেজির Fiction- শব্দের উচ্চারণের বাংলান্তর। ফিকশন শব্দের অর্থ কাল্পনিক। এবং, এক্ষেত্রে নন-ফিকশন শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয় বাস্তবিক। অর্থাৎ যা বাস্তব থেকে নেয়া। এই নিবন্ধটিতে আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সামনে তুলে ধরতে ফিকশন এবং নন- ফিকশন সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্য।
যে সাহিত্যের উপাদানগুলো কাল্পনিক ভাবনা থেকে আসে, সেগুলোকে ফিকশন বলে। সাহিত্যে ফিকশন উপন্যাস পাওয়া যায়, আর দেখা যায় নাটক ও গল্প। ফিকশন বা কাল্পনিক সাহিত্যে উপাদান গুলো যেকোনো বাস্তব উপাদানের ভিত্তিতেও কল্পনায় নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ফিকশনটি বা কল্পনাকি বৈজ্ঞানিক হতে পারে, কিংবা অন্ধবিশ্বাস হতে পারে, হতে পারে একদম শুদ্ধ কল্পনাও; যাতে বাস্তবের কোনই উপাদান নেই।
ফিকশন সাহিত্য মানুষের কল্পনা শক্তিকে বাড়ায়ে দেয়। মানুষ তাঁর ভাবনার ভেতরে সাজাতে এবং বানাতে পারে নিজস্ব জগৎ। কাল্পনিক সাহিত্যের বিষয় কাল্পনিক হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো মূলত বাস্তবের মানুষের জন্যই লেখা হয়। তাতে বেশির ভাগ সময় দর্শনই খুঁজে পাওয়া যায়, খুঁজে পাওয়া যায় নরতুন ভাবনা যা বাস্তব নয় তবে দেখায় এক নতুন বাস্তবের সত্তা।
তবে, এখন প্রশ্ন থাকে নন- ফিকশন কি? এই বিষয়েও ওপরের অংশে একটি বিষয় উল্লেখ করেছি। আর তা হল, যেহেতু ফিকশন মানে কাল্পনিক; সেহেতু নন- ফিকশন শব্দটি দাঁড়ায় বাস্তবিক সাহিত্যে। অর্থাৎ, যে সাহিত্যের উপাদান গুলো বাস্তব থেকে নেয়া এবং বাস্তবের সাথে পঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মিলে যায়, সেগুলোকেই নন- ফিকশন সাহিত্য বলে।
নন- ফিকশন সাহিত্যে বিষয় বস্তুগুলো বাস্তব থেকে নেয়া। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাস্তবে ঘটে গেছে এমন, অথবা ঘটে যায় এমন, অথবা ঘটছে এমন বিষয়বস্তু নিয়ে সাহিত্য রচনা করা হয়। নন- ফিকশন সাহিত্য আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া বাস্তবকে সাহিত্যে ধরে রাখে। এক্ষেত্রেও ভাবনার বিষয়টা এক মাত্রার বাস্তবে স্থির থাকে না, হয়ে যায় বহুমুখি।
ফিকশন ও নন-ফিকশন সাহিত্যের মধ্যের পার্থক্যগুলো বিষয়বস্তু দুটির একটিকে অপরটির চেয়ে ছোট করে না। বরং, একে ওপরের মধ্যের পার্থক্যগুলো বিষয়বস্তু দুটির ব্যাপকতা বোঝায়। এই মুহূর্তে চেষ্টা করবো ফিকশন ও নন- ফিকশন সাহিত্যের মধ্যের পার্থক্য গুলো যতটা সম্ভব সহজ ভাবে তুলে ধরার।
ফিকশন সাহিত্য বা কাল্পনিক সাহিত্য আধুনিক সাহিত্যে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। ফিকশন সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটেছে; বিকাশ ঘটেছে লিখিত সাহিত্যের। কারণ, ফিকশন সাহিত্যে বিষয়বস্তু বাস্তবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ফিকশন সাহিত্যে বিষয়বস্তু হতে পারে লেখকের একান্ত কাল্পনিক এবং সেখানে যেকোনো বস্তু দৃশ্যত হয় শুধুমাত্র লেখকের কল্পনা থেকে।
অপরদিকে, নন- ফিকশন সাহিত্যে বিষয়বস্তু থাকে বাস্তবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে নন-ফিকশন সাহিত্যে মানুষ বাস্তবকে নতুন রূপে দেখে লেখকের ভাষার দক্ষতার মাধ্যমে । শব্দের ব্যাবহার এবং প্রত্যেক পঙ্কতিতে উঠে আসা বাস্তবতাকে নতুন করে ভাসিয়ে তোলে পাঠকের মনে। নন- ফিকশন সাহিত্যে অনেক সময় ফিকশনের মতো রুপকভাবেও দেখানো যায় বাস্তবতা।
ফিকশন সাহিত্য দেখায় মানুষের কল্পনার বাস্তবতা। আর, নন-ফিকশন দেখায় একজন মানুষের বাস্তবের ধারণা। তাঁর দেখা, শোনা এবং অনুভব করা দর্শন। ফিকশন সাহিত্য নন- ফিকশনের আরেকটি বর্ধিত রূপ। যখন মানুষ নন- ফিকশন সাহিত্যে নতুন ধারা উন্মোচন করতে পারেনা তখন তারা ফিকশন সাহিত্য রচনা করেন। আবার, নন- ফিকশন সাহিত্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের বর্ণনা উঠে আসে, এবং সময়ের কথা বলে এবং সেই সময়কার মানুষের জীবনাচরণ এবং বোধ-অনুভুতি তুলে ধরে।
ওপর দিকে একটি ফিকশন সাহিত্য একটি নতুন অনুভবের জন্ম দিতে পারে যা আগে কখনও অনুভব করা সম্ভব হয়নি। আর এই ভাবেই ফিকশন এবং নন- ফিকশন সাহিত্যের পার্থক্যগুলো একে ওপরের ব্যাপকতা প্রকাশ করে।
ফিকশন ও নন- ফিকশন সাহিত্যের ব্যাপকতা নিয়ে বলতে গেলে, বলে শেষ হবে না। কারণ, এই পুরো মহাবিশ্বের যেকোনো কিছুকে ফিকশন অথবা নন- ফিকশন ভাগে ভাগ করা যায়। আর, ফিকশন এবং নন- ফিকশন বিভাজন দুটি যে শুধুমাত্র একটা বিষয়বস্তুকে বাস্তব আর অবাস্তবে ভাগ করতে পারে; শুধু তাইই নয়। বাস্তব আর অবাস্তব পার্থক্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস এমনকি সত্য- মিথ্যাও নির্ভর করে।
ফিকশন বিষয়বস্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষকে ভাবায়; আর যখন মানুষ এমন কোন নন- ফিকশন সাহিত্য পাঠ করে যা তাদের বাস্তবের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু বাস্তব; সেক্ষেত্রে তারা আবার নতুন করে বাস্তবতা নিয়ে ভাবে। তো এই হল মূলত ফিকশন ও নন- ফিকশন বা কাল্পনিক ও বাস্তব বিষয়বস্তুর সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্য এবং তাঁর ব্যাপকতা।
আশাকরি, যতটা সম্ভব সহজে আপনাদের কাছে ফিকশন ও নন- ফিকশন এর মধ্যে পার্থক্য বুকঝাতে পেরেছে।
নন-ফিকশন লেখা

নন-ফিকশন লেখা


নন-ফিকশন বলতে এমন যেকোনও লেখাকে বোঝায়, যা কোনও ঘটনা, স্থান, কাল বা পাত্র সম্পর্কে সঠিক ও বাস্তবিকভাবে সত্য তথ্য প্রদান করে। নন-ফিকশন হলো বাস্তব ও সত্য বিষয় ও ঘটনানির্ভর গদ্য সাহিত্য । নন-ফিকশন রচনার বিষয়বস্তু বস্তুনিষ্ঠ কিংবা ব্যক্তিনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয় । কদাচিৎ গল্প বা কাহিনীর মতোও রচিত হতে পারে।

নন-ফিকশন গদ্যসাহিত্যের একটি প্রধান শাখা বা শ্রেণী।

কথাসাহিত্য বা ফিকশন বা কল্পকাহিনী:
নন-ফিকশন সাহিত্যের বিপরীত শাখাটি হল কল্পকাহিনী বা কথাসাহিত্য, যেখানে স্থান, কাল ও পাত্র সম্পর্কে তথ্যগুলি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক হয়ে থাকে।
যেমনঃ গল্প,কবিতা,ছড়া,উপন্যাস ও বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী ।


নন-ফিকশন রচনাতে যেসব বর্ণনা থাকে, তা সম্পূর্ণ সঠিক বা সত্য হতে পারে বা না-ও হতে পারে। তবে নন-ফিকশন রচয়িতারা বিশ্বস্ততার সাথে সত্য ও সঠিক তথ্য লিখেছেন বলে দাবী করেন এবং পাঠকেরাও পড়ার সময় এ ব্যাপারটি মেনে নিয়েই পড়েন।

ইতিহাস,বিজ্ঞান,
প্রকৃতি,জীবনী,
ব্যবসা, শিক্ষা,
ভাষা,
ভ্রমণ,
রাজনীতি,
হাস্যরস,
খাদ্য, পানীয়,
স্বাস্থ্য, জীবনচর্যা,
ক্রীড়া,
শখ, শিল্পকলা,
বিনোদন,
গৃহ, উদ্যান চর্চা,
ধর্ম,গ্রন্হ প্রতিবেদন,
দিনলিপি,বিশ্বকোষ,
সাহিত্য সমালোচনা,
গবেষণা গ্রন্হ
ও প্রবন্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নন-ফিকশন বই রচিত হতে পারে।

Tuesday, July 13, 2021

Saturday, June 26, 2021

বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন

বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন

বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা স্থানগুলোর সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা, গলাচিপার সোনার চর ও সুন্দরবন মিলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটায় রয়েছে ইকোপার্ক। এখানে ছোট-বড় ১২টি কিল্লা, ৭টি পুকুর রয়েছে। হরিণ বেষ্টনী, কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও শুকর বেষ্টনীসহ একটি পিকনিক স্পট রয়েছে। ফকিরহাট বাজারের কাছাকাছি একটি ব্রিজের মাধ্যমে সোনাকাটা জঙ্গলে যাওয়া যায়। এটাই পর্যটকদের প্রবেশদ্বার। যোগাযোগ এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত হলে এটি হবে পর্যটনের চমৎকার স্থান।
সোনাকাটার পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন ও হরিণবাড়িয়া, উত্তরে রাখাইন পল্লী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সোনাকাটা থেকেও উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা বরগুনা জেলাটি ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ বাংলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যস্থলে অবস্থিত। 

বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা স্থানগুলোর সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা, গলাচিপার সোনার চর ও সুন্দরবন মিলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। বরগুনা জেলার পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : সদর উপজেলার গোড়াপদ্মা, ছোনবুনিয়া, বাইনচটকির চর, খাকদোন নদীর মোহনা, তালতলীর রাখাইন পল্লী, আশারচরের সমুদ্র সৈকত, শুঁটকি পল্লী, সোনাকাটা, পাথরঘাটার লালদিয়ার চর। এছাড়া সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, ডিমের চর এবং দুবলার চর, কুয়াকাটা, সোনারচরসহ আরও কিছু স্থান বরগুনার একেবারে কাছে। 

কুয়াকাটা পটুয়াখালীর কলাপড়া উপজেলাতে অবস্থিত হলেও ভৌগোলিকভাবে ১৯৬৯ সালেও বরগুনা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর কলাপাড়াকে পটুয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সড়ক পথে বরগুনা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব পটুয়াখালীর তুলনায় কম। ফলে পর্যটকরা বরগুনা ভ্রমণের মধ্যে কুয়াকাটাকেও রাখতে পারেন। 

পাথরঘাটা উপজেলার সর্ব দক্ষিণে হরিণঘাটা চর। এ চরে রয়েছে হরিণ ও বন্য শুকর। রয়েছে দীর্ঘ সৈকত। সৈকতে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। হরিণঘাটার গহীন ঝাউবনের নিচে বসে শুনতে পাবেন বাতাসের শো শো শব্দ। সমুদ্র দেখলে মনে হবে স্বপ্নের মাঝে রয়েছেন। রাতের আঁধারে হরিণের পাল এসে ঝাউবনের নিচে আশ্রয় নেয়। তাও দেখার মতো দৃশ্য। 

বরগুনার বেতাগী উপজেলায় রয়েছে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী বিবিচিনি শাহী মসজিদ। মূল ভূমি থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেছেন আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র.)। ১৬৫৯ সালে পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি এ অঞ্চলে আসেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুট ও প্রস্থে ৩৩ ফুট। দেয়াল ৬ ফুট চওড়া। 

সুন্দরবনের সব স্পটে যেতে হলে পুরো দিনটাই লঞ্চে ভ্রমণ করতে হবে। বরগুনা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ খুবই সহজ। সকালে গিয়ে বিকেলে বরগুনায় ফিরে আসা যায়। অথবা ২-৩ দিনের খাবার নিয়ে লঞ্চেও থাকা যায়। সুন্দরবনের কটকাসহ আশপাশের স্পটগুলো হলো কচিখালী, ডিমের চর ও দুবলার চর। ঝাঁক বাঁধা হরিণ ও বানরসহ ভাগ্য প্রসন্ন হলে দেখা যাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রাতে কটকার অভয়ারণ্যে ভিড় করে হরিণের পাল। 

কুয়াকাটাকে নতুন করে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায় এর সৈকতে। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, রাখাইন ঐতিহ্য, শুঁটকি পল্লী, ঝাউবন ও ইকোপার্কসহ নানা কারণেই কুয়াকাটা দেশের অন্যতম বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। কুয়াকাটা থেকে বরগুনার দূরত্ব অন্যান্য জেলার চেয়ে খুবই কম। তাই কুয়াকাটা ও বরগুনা মিলে একটি সমন্বিত পর্যটন এলাকা গড়ে উঠতে পারে। 

এছাড়াও বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভ্রমণ স্পট। গোড়াপদ্মায় গড়ে উঠেছে ছোট আকারের পর্যটন কেন্দ্র। বিকেলের অসংখ্য মানুষ এ সব স্থানে ভিড় করেন। বরগুনা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে প্রাকৃতিক জঙ্গল। চারদিকে নদীবেষ্টিত ওই জঙ্গলে রয়েছে হরিণ। পিকনিকে জন্য এটি অপূর্ব সুন্দর স্পট। এ ছাড়া লবণগোলা, ছনবুনিয়া, কুমিরমারা ও বড়ইতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। একসঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বরগুনা একটি অসাধারণ জায়গা। 

তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্যান্য জায়গার তুলনায় বরগুনা কোনো অংশেই কম হবে না।এমন কি এই জেলাকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আর একই স্থানে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়, দেখা যায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। 

আর কুয়াকাটার পশ্চিমে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটায় নির্জন গভীর অরণ্য। এখানে রয়েছে মায়াবী চিত্রা হরিণের পাশাপাশি মেছো বাঘ, কুমির,কাঠ বিড়ালিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। এরপরই পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়া যেখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন। কাঠের পাটাতনের ব্রিজ ধরে গভীর বনে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ। শুধু ব্রিজ নয়, টাওয়ারে উঠে বা ছোট নৌকা ভাড়া করে বন দেখার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এখানে। 

দক্ষিণে এ তিনটি পর্যটন কেন্দ্র পাশাপাশি হলেও দুটি নদী বিচ্ছিন্ন করেছে কেন্দ্রগুলোকে। আর একটি কেন্দ্র থেকে আরেকটিতে যাওয়ার নেই কোনো ব্যবস্থা। বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন এক চমৎকার বন দাঁড়িয়ে আছে বরগুনার পাথরঘাটায়। হরিণঘাটার বন নামে পরিচিত এই বনে দিনদিন বেরে চলছে। ২০ হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন। বন অধিদপ্তর ১৯৬৭ সালে হরিণঘাটা বন সম্প্রসারণে পরিকল্পিত বনায়ন শুরু করে। পরে ২০১৩ সালে এখানে ১০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় নতুন বন সৃজিত হয়। বনের ভেতরে পর্যটকদের পায়ে চলার জন্য তৈরি কর হয়েছিল (ফুট ট্রেইল) বা সেতু আর এই মায়ায়ই দর্শনার্থীদের টানছে এখানে। আর এই ফুট ট্রেইল এখন ভেঙ্গে নেই বললেই চলে। এখানে চলতে গেলে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে চলতে হয়। কারন, এই ফুট্রেইলের পায়ে চলার পথ নির্মাণের ফলে হরিণঘাটা বন আকর্ষণীয় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বনের ভেতর উঁচু পিলারে তৈরি করা হয়েছে চার তলা ওয়াচ টাওয়ার যার উপর দাড়িয়ে মানুষ নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে বনের প্রাণ-প্রকৃতি ও সাগরতীর দর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্রামাগার ও গোলঘর যেখানে পর্যটকরা বিশ্রাম নিতে পারে। এই বনের ভিতরের দৃশ্য দেখার জন্য ফুটট্রেইল নির্মান করার হয়েছে পর্যটকদের জন্য। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া সমুদ্রপাড় পর্যন্ত যেতে ৯৫০মিটার ফুট-ট্রে ব্রিজ, ৪টি পাকা গোলঘর, একটি ব্রিজ করা হয়েছে। 

ত্রিমুখী এই পর্যটন এলাকা সুন্দরবন ও কুয়াকাটার মাঝখানে। লালদিয়া, সোনাকাটা ও কুয়াকাটা নিয়ে সরকারের পর্যটন জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার উপায় -১

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার উপায় -১

“একটি বেস্ট প্র্যাকটিস, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার উপায়” লিখেছেন : কাজি জহিরুল ইসলাম 

শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন মর্নিং ওয়াকে বেরুলাম, তখন আমার রিভিয়েরার বাড়িকে প্রদক্ষিণ করে ছুটে যাওয়া দুই কিলোমিটারের সার্কেলটি একেবারে অচেনা লাগছে । রাস্তায় একটাও ঝরাপাতা নেই, ফুটপাথের ভাঙা কংক্রিটের ফাক গলে গজিয়ে ওঠা ঘাসের ডগা নেই । পাইনের কিরিকিরি পাতার যে আস্তরণ রোজ সকালে মাড়িয়ে পা ফেলি সেখানে এখন ঝকঝকে পিচঢালা পথের কালো চিতানো বুক । পথের ওপর একটাও সিগেরেটের বাট নেই, আবর্জনায় নাক ডুবিয়ে পড়ে থাকা ছেঁড়া পলিথিনের ব্যাগ নেই, এমন কি পথের কোথাও সাত সকালে কে এসে অমন সাফ করে দিয়ে গেল? 

আমাদের সকল উদ্বেগ, উৎকন্ঠার অবসান ঘটলো আধ কিলোমিটার পথ পার হওয়ার পরেই । যেন একটা উৎসবে মেতে উঠেছে সার্কেলের দুই পাশে বসাবসারত বাসা-বাড়ির ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে ২৩/২৪ বছর বয়েসী তরুণী/তরুণ । প্রত্যের হাতে ঝাঁটা, মোশেইদ (রামদা জাতীয় ধারালো অস্ত্র, মাথার দিকটা প্রায় তিন ইঞ্চি চ্যাপ্টা), ময়লা তোলার কোদাল, খুন্তি, দুই/তিন মিটার পর পর নীল রঙ্গের বালতির সারি । আর অপেক্ষাকৃকত বড়রা, ময়লাভর্তি ভ্যানগুলো ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে একটা নির্দিষ্ট স্হানে ।

এক্তেদার সাহেব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বল্লেন, ও তাহলে এই হলো ঘটনা ! হাঁ, এই হলো ঘটনা । ঘটনাটি আমি এজন্য লিখছি, এটিকে একটি বেস্ট প্র্যাকটিস হিসাবে চিহ্নিত করে আমি বাংলাদেশের মানুষকে জানাতে চাই ।
আজ আবিদজানের যে সব ছেলে-মেয়েরা নীল বালতি নিয়ে ভোর পাঁচটায় রাস্তায় নেমে এসেছে নিজের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য, তারা সবাই আমাদের মতোই তৃতীয় বিশ্বে বসবাসকারী স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে । এটা ওদের দীর্ঘ দিনের প্র্যাকটিস । ফরাসীরা দীর্ঘ ঔপনিবেশকালে অন্য অনেক জিনিজের মতো পরিচ্ছন্নতাও যে একটি শৈল্পিক সৌন্দর্য এই বোধ ওদের মগজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, যা ইংরেজ আমাদের শেখাতে পারেনি । 

এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানটি ওরা চালায় মাসে একদিন, একটি নির্দিষ্ট শনিবারে । করো চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, অবসন্নতা নেই । সকলেই যেন একটি উৎসব আনন্দে উদ্দেপিত, উদ্বেলিত । যেন এক মহৎ কর্মযজ্ঞে শামিল হতে পেরে ধন্য সবাই । মুখে হাসি নিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ভোরের ফুরফুরে হাওয়ার মতো উডে বেড়াচ্ছে । একটু যারা বড় তারা নিজেরা কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের কাজ মনিটরও করছে । যদি কোন শিশু কাজ রেখে ধুলা বালি দিয়ে খেলতে নেমে গেল, তখন হাসি দিয়ে ওকে কাজে ফিরিয়ে আনছে । ফরাসী ভাষায় এমন কিছু বলছে, অনুমাণ করছি, আজকের এই কাজ করাটাই খেলা, এমন কিছু বুঝতে পেরে শিশুটি দৌড়ে এসে কাগজ কুড়াতে শুরু করে দিলো । পিচঢালা পথটি দুই কিলোমিটারের একটি বৃত্ত রচনা করে যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো আবার ঠিক সেখানে এসেই শেষ হয়েছে । অথবা বলা যায় পথটি কেবল অনন্তকাল ধরে বৃত্তাকারে ঘুরছেই, শেষ খুঁজে পাচ্ছে না । 


পথের ডানদিকে অর্থাৎ বৃত্তের বাইরের অংশে প্রায় পঞ্চাশ মিটার ফাঁকা জায়গা, পিচঢালা পথটির সমান্তরাল ছুটে গেছে, যা ঘাসের ঘন অবণ্য আর মাঝে মাঝে আপন মনে বেড়ে ওঠা বনবট,বিশাল মোটা মোটা নিম, পান্হনিবাস, ভোগেনভেলিয়া, মাধবলতাসহ নানান প্রজাতির বৃক্ষলতায় শোভিত । তার পেছনেই সারি সারি হলুদ রঙের তিন তলা বাড়ি । এরই একটি বাড়িতে আমার বাসা । আর বাঁ দিকে, অর্থাৎ সার্কেলের ভেতরে একই দুরত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল জায়গা জুড়ে একেকটি নয়নাভিরাম ভিলা । এক দল তরুণ অন্তহীন উৎসাহে মেশিন চালিয়ে দু’পাশের এই ফাঁকা জায়গায় গজানো ঘাসবন ট্রিম করছে । এক দল ফুটপাথের পাথরের ফাঁকে গজানো ঘাসের ডগা কেটে সাফ করছে, এক দল রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে, এক দল কোদাল নিয়ে নীল বালতিতে পাথরের ধুলি কাদা, ছেড়া কাগজ, কয়লা আবর্জনা ঝরাপাতার স্তুল তুলে নিচ্ছে । ভ্যানগাড়িগুলো কাছে এগিয়ে আসতেই ময়লাভর্তি সারি সারি নীল বালতি তাতে উপুড় হয়ে যাচ্ছে । যেন একটা প্রশিক্ষিত চেইন ওয়ার্ক । পরিস্কার করতে করতে পুরো দলটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, পেছনে রেখে যাচ্ছে একটি ঝকঝরে পরিচ্ছন্ন পথ ও তার পরিবেশ । 

গত জুলাই মাসে যখন ঢাকায় যাই, তখন দেখলাম গুলশান এক নম্বরেরে সেই অতি পরিচিত সার্কেলটি আর নেই । ওখানে এখন লাইট ফাইট লাগিয়ে একটা জবরদস্ত চৌরাস্তা বানানো হয়েছে, যদিও এতে জানজট আরও বেড়েছে । সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তারই দুপাশে ছোট দুইটি আইল্যান্ডে বাগান করা হয়েছে । খবররের কাগজ কিনতে যখন ডিসিসি মার্কেটে গেলাম তখন দেখি একটি ২৪ ২৪ বছরের যুবক সেই বাগান সাফ করছে । ওর সাফ করার ধরণ দেখে আমার খুব হাসি পেল । বাগান থেকে কুড়িয়ে এসে সে ছেড়া কাগজের টুকরাগুলি পথের ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছে । ভাবলাম, ওকে দুটো কথা বলা আমার নাগরিক দায়িত্ব । এগিয়ে গিয়ে বললাম, তুমি যে কাগজের টুকরাগুলো পথের ওপর ফেলছো, এগুলোতো বাতাসে উড়ে আবার বাগানেই ফিরে যাবে । ও খুব বিরক্ত ভঙ্গিতে আমাকে বললো, তাইলে কি করুম, আমি বললাম, একটা ব্যাগ নাও । ময়লা, আবর্জনা, কাগজের টুকরা, সিগারেট বাট এইসব কুড়িয়ে ব্যাগে ভরো । তারপর নিকটস্হ কোনো ডাস্টবিনে নিয়ে ফেল । ও বললো, ব্যাগ পামু কই ? এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই । তবে আমি আশা করছি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে এর একটা সদুত্তর আছে ।

আবিদজানের এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এতো গোছানো কাজ দেখে আমার কেবল গুলশানের সেই ছেলেটির কথাই মনে পড়ছে আর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে ঢাকা শহরের, আমাদের বাড়ি ঘরের চারপাশের, আবর্জনাময় নোংরা পরিবেশের অসহায় চিত্রটি । 

আবিদজান, আইভরিকোস্ট ৩১ মার্চ ২০০৬